| |||||||
|
|||||||
দণ্ড মহৎসব
ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তি নির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের হরি-কথামৃত
মূকং করোতি বাচালং পঙ্গুং লঙ্ঘয়তে গিরিম্ । “বোবা লোকও বাচাল হতে পারে, পঙ্গুলোকও পাহাড় উলঙ্ঘন করতে পারে যদি শ্রীগুরুপাদপদ্মের কৃপা হয় ।” আপনারা বহু ভাগ্যের ফলে আজকে এখনে রঘুনাথদাস গোস্বামীর দণ্ড মহৎসব করতে এসেছেন । দণ্ড মানে কী ? শাস্তি । এই শাস্তি এই জগতের শাস্তি নয়—এই শাস্তি পেলে ভাগবত-ধামে যাওয়া যায় । এই ‘শাস্তি’ নিত্যানন্দ প্রভু দিয়েছিলেন রঘুনাথদাস গোস্বামীকে । এক আদিসপ্তগ্রামে দুই ভাই জমিদার ছিলেন, হিরণ্য ও গোবর্ধন ; আর তাঁদের একটা মাত্র পুত্র ছিল, তাঁর নাম ছিল রাঘুনাথ । এখানে যখন রঘুনাথ এসেছিলেন, তখন নিত্যানন্দ প্রভু তাঁকে বললেন, “আয়, চোর, আয় ! তোকে আজ শাস্তি দেব !” চোর বললেন ! নিত্যানন্দ প্রভু ওঁকে চোর বলেছিলেন কেন ? প্রভু জানতেন, “তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে বাদ দিয়ে, আমাকে না জানিয়ে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সঙ্গ করতে গিয়েছো, তোমার গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর কৃপা এইজন্য হয় নি ।” আপনি জানেন, মহাপ্রভু সন্যাস নিয়ে যাওয়ার পরে যখন শান্তিপুরে অদ্বৈত-অঙ্গনে এসেছিলেন, তখন রঘুনাথদাস গোস্বামী ওখানে দেখা করতে গিয়েছিলেন গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সঙ্গে, তারপর বারবার (একবার-দুবার না, হাজারবার !) তিনি গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর কাছে গিয়েছেন কিন্তু কৃপা কখনও পেলেন না । মহাপ্রভু তাঁকে সবসময় বললেন, “বাড়ি ফিরে যাও ! ঘরে যাও, বাতুল হও না ! ওই মর্কট বৈরাগ্য, লোক দেখানো বৈরাগ্য কর না ! ঘরে গিয়ে সংসার কর ।” এই সব প্রভু বললেন, কৃপা হয়নি । যখন পরে নিত্যানন্দ প্রভু সমস্ত ভক্তগণকে নিয়ে এখানে (পানিহাটিতে) আসলেন আর এই বড় গাছেন তলে বসেছিলেন, তখন রঘুনাথ তাঁর বাবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এখানে আসলেন । তাঁকে দেখে একজন নিত্যানন্দ প্রভুকে বলল, “দেখুন না, প্রভু, ওই যে রাঘুনাথ আসছে !” প্রভু বললেন, “কই ? কোথায় ? কোথায় ? আয়, চোর, আয় ! তোকে আজকে শাস্তি দেব !” তখন রঘুনাথ নিত্যানন্দ প্রভুকে দণ্ডবৎ করে জিজ্ঞেস করলেন, “কী শাস্তি, প্রভু ? বলুন ।” নিত্যানন্দ প্রভু বললেন, “এই যে ভক্তগণ এখানে আছে, এই তোমার সব ভক্তগণকে আজকে চিড়া, দধি, আম, ইত্যাদি খাওয়াতে হবে ।” রঘুনাথ বললেন, “এটা আমার শাস্তি নয় ! এটা আমার ভাগ্যের কথা ।” তখন তিনি দোকান থেকে সব পাতা খাবার ইত্যাদি কিনে নিয়ে এসে সব লোককে দিয়ে দিলেন—অনেক লোক গঙ্গায় নেমে গিয়ে এই প্রসাদ পাওয়ার জন্য, কত লোক ছিল ! আজকেও আপনি দেখছেন কত লোক এখানে এসেছিল । রঘুনাথদাস গোস্বামী উত্তম ভক্ত ছিলেন—উত্তম মানে আসল, শুদ্ধ ভক্ত । সেটা কি করে হল ? সেটা অনিশীলন করতে করতে হয় । রঘুনাথদাস গোস্বামীর উত্তম, আসল সতীত্ব ছিল (সতীত্ব মানে যেমন মেয়ের বড় নিষ্ঠা বা সতীত্ব) । কি রকম তাঁর সতীত্ব ছিল ? তিনি রাধারাণীর-জন—তাঁকে ছেড়ে কিছু বুঝতেন না । যখন বৃন্দাবনে রঘুনাথদাস গোস্বামী ছিলেন, তখন প্রত্যেক দিন জানেন কি খেতেন ? মাঠা (আমরা বলি ‘ঘোল’) । দই দিয়ে ঘোল হত—ওইটা তিনি প্রত্যেক দিন খেতেন । এক জন ব্রজ-বাসী প্রত্যেক দিন এক পদ্ম পাতায় দোনা করে তাঁর কাছে এ ঘোল নিয়ে আসতো । রঘুনাথদাস গোস্বামী ভাবতেন, “রাধাকুণ্ড বিনা অন্য দিকে মতি নাই—যেই দিকে আমার মন, প্রাণ দিয়ে দেব, সেই দিক থেকে সব কিছু নিয়ে নেব ।” সেইরকম প্রত্যেক দিন এই ব্রজ-বাসী রাধাকুণ্ডের পদ্মের দোনায় মাঠা নিয়ে আসতো, কিন্তু এক দিন হঠাৎ করে সেই পাতা দেখে রঘুনাথদাস গোস্বামী জিজ্ঞেস করলেন, “বাবা, পাতাটা কোথা থেকে নিয়ে এসেছো ?” ব্রজ-বাসী বলল, “আজকে রাধাকুণ্ডে যেতে পারি নি, আজকে আমি ওই চন্দ্রাবলীর কুঞ্জে গেয়েছি…” (চন্দ্রাবলীর সাথে রাধারাণীর কী সম্পর্ক ? তারা শত্রু । রাধারাণীর ভাবটা বাম্য-ভাব আর তাঁরা পস্পর্কে সহ্য করতে পারেন না । কৃষ্ণকে রাধারাণী হচ্ছেন প্রিয় আর চন্দ্রাবলী তাঁকে হিংসা করেন ।) তাই যখন রঘুনাথদাস গোস্বামী শুনলেন, “চন্দ্রবলীর-কুঞ্জে গিয়ে ওখান থেকে নিয়ে এসেছি,” তিনি সঙ্গে সঙ্গে এই পাতাটা মাঠার সাথে ছুড়ে ফেলে দিলেন—প্রসাদ নিলেন না ! এটা বলা হচ্ছে সতীত্ব (চ্যাস্টিটি) । এইটা সবসময় গুরু মহারাজ বলতেন । আমাদের লাইনটাও হচ্ছে এইরকম—আমরা সব জায়গায় মিশি না, আমরা সব জায়গায় যাই না, সব জায়গায় খাই না, সব জায়গায় চলি না, সবার সঙ্গে মিশি না, সবাইয়ের প্রসাদ খাই না, পরদেবদেবীর প্রসাদ পাই না, পরদেবদেবীর পূজা করি না । আমার লাইনটা হচ্ছে রাধারাণীর লাইন, শ্রীরূপানুগ লাইন (রূপ গোস্বামীর লাইন) আর সেই লাইনে আমাদেরকে চলতে হবে । সেই লাইন ছাড়া অন্য লাইন আমরা চলতে পারব না । সেইভাবে, রঘুনাথদাস গোস্বামীর চ্যাস্টিটি (সতীত্ব) আপনারা মনে রাখবেন ।
|
অন্য রচনা: • শ্রীনৃসিংহদেবের কথা • দণ্ড মহৎসব • মায়ার চিন্তা বা কৃষ্ণের চিন্তা ? • আমাদের একমাত্র উপায় • ভক্তির অভাব • গৃহে আবদ্ধ • মায়ের পেট থেকে মায়ার পেটের মধ্যে • জীবকে সত্য দয়া কি ? • ভোগী নই ত্যাগীও নই • শ্রবণ-কীর্ত্তনে মতি • ভগবানের কৃপা ও আপনার চেষ্টা • শান্তির গুপ্ত কথা • পবিত্র জীবন • বামনদেবের কথা • ভক্ত ও নাপিত • ভগবানের চরণে পথ • পূজনীয় বিসর্জন • শিবজী মহারাজ : পরম বৈষ্ণব • শ্রীহরিনাম দীক্ষা : গুরুপাদপদ্মের দান • আমি তো সব ব্যবস্থা করি নাকি ? • চকচক করলেই সোনা হয় না • আমার শোচন |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |