আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীপুরীধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা


মহাপ্রভুর ইচ্ছা ও পুরীতে যাত্রার আরম্ভ

 

মূকং করোতি বাচালং পঙ্গুং লঙ্ঘয়তে গিরিম্ ।
যৎকৃপা তমহং বন্দে শ্রীগুরুং দীনতারণম্ ॥

“বোবা লোক বাচাল হতে পারে, পঙ্গুলোক পাহাড় উলঙ্ঘন করতে পারে যদি শ্রীগুরুপাদপদ্মের কৃপা হয় ।” সর্ব্বাগ্রে মদীয় গুরুপাদপদ্ম ওঁ বিষ্ণুপাদ জগৎগুরু শ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজের রাতুলচরণে ষাষ্টাঙ্গে দণ্ডবৎ পূর্ব্বক সেবামুখে তাঁহার অহৈতুকী কৃপা প্রার্থনা ভিক্ষা করছি । তৎপর গুরুবর্গ, গুরুভ্রাতৃমণ্ডলী, শ্রোত্রমণ্ডলী, মাতৃমণ্ডলী, ভক্তমণ্ডলী আপনাদের শ্রীচরণে অধমের দণ্ডবৎ প্রণতি জ্ঞাপন করছি যে এই অধমকে কৃপা করবেন ।

এই কলিযুগে ভগবান দুটি কারণে এসেছেন, একটা বহিরঙ্গ আর একটা অন্তরঙ্গ । তাঁর বহিরঙ্গ কর্তব্য হচ্ছে এইরকম : এখানে এসে তাঁর কিছু দিতে হবে—কী তিনি দেবেন ? তিনি যুগের ধর্ম্ম স্থাপন করে সব জীবগণকে হরিনাম মহামন্ত্র বিতরণ করেছেন । আর তাঁর অন্তরঙ্গ কর্তব্য হচ্ছে এইরকম :

শ্রীরাধায়াঃ প্রণয়মহিমা কীদৃশো বানয়ৈবা-
স্বাদ্যো যেনাদ্ভুতমধুরিমা কীদৃশো বা মদীয়ঃ ।
সৌখ্যঞ্চাস্যা মদনুভবতঃ কীদৃশং বেতি লোভা-
ত্তদ্ভাবাঢ্যঃ সমজনি শচীগর্ভসিন্ধৌ হরীন্দুঃ ॥

(চৈঃ চঃ, ১/১/৬)

“রাধারাণী প্রণয়মহিমা কী ? রাধারাণী আমার নাম করে এত কেন কাঁদে ? রাধারাণী আমার সেবা করে কী শান্তি পায় ?”—এই তিনটি প্রকারের রসটাকে আস্বাদন করবার জন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই কলিযুগে রাধারাণীর ভাব ও কান্তি ধরে অবতীর্ণ হয়েছেন ।

সেইজন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য রাধাভাব ধারণা করার জন্য নবদ্বীপ ছেড়ে দিয়ে পুরীধামে ছিলেন । জগন্নাথদেবের কাছাকাছি গিয়ে তিনি গম্ভীরায় থেকে এই বিপ্রলম্ভ লীলা আঠার বছর ধরে আস্বাদন করতেন । বিরহ-লীলা বা বিপ্রলম্ভ-লীলা মানে কৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে যাওয়ার পর রাধারাণীর যে বিরহ হয়েছে, রাধারাণীর যে অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়েছিল, যে ভাব তাঁর হয়েছিল, সে ভাবটাকে আস্বাদন করবার জন্যই মহাপ্রভু ওই গম্ভীরায় আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন ।

 

যখন নিমাই বিশ্বম্ভর তাঁর গুরু শ্রীঈশ্বর পুরীর শ্রীচরণে আশ্রয় গ্রহণ করেলন, তখন রাধাভাব প্রকাশ করতে শুরু করে তিনি কৃষ্ণপ্রেম বিতরণ করতে বাসনার জ্বালে অভিভূত হয়েছিলেন, কিন্তু সাধারণ লোক সেটা বুঝতে পারতেন না—সবাই বললেন নিমাই পাগল হয়ে গিয়েছিলেন । তখন নিমাই ঠিক করলেন, “আমি এত কষ্ট করে এই হতভাগ্য জীবগণকে উদ্ধার করবার জন্য চেষ্টা করছি কিন্তু আমি দেখছি যে, ওরা আরও বেশী পাপ করছে, আমাকে গালাগালি দিচ্ছে আর শাস্তিও দিতে চাইছে । আমি কি জন্য এখানে এসেছি ? ওদেরকে কি করে পার করব ? আমার সন্ন্যাসী হতে হবে ! নইলে আমাকে ওদের মত গৃহস্থ মানুষ দেখে ওরা নরকে যাবে । আমি যদি সন্ন্যাস গ্রহণ করি, তখন ওরা আমাকে মানবে ।” সন্ন্যাস গ্রহণ করতে মন করে নিমাই নিত্যানন্দ প্রভু ও আরও কয়েক ভক্তগণকে জানালেন, “এই বছর মাঘ মাসের প্রথম দিনে আমি সন্ন্যাস গ্রহণ করব ।” যখন সেই দিন মহাপ্রভু কাটোয়ায় এসেছিলেন, তখন নিত্যানন্দ প্রভু ভক্তগণকে নিয়ে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ।

কাটোয়ায় সন্ন্যাস গ্রহণ করার পর মহাপ্রভু ঠিক করলেন যে, তিনি বৃন্দাবনে যাবেন । সমস্ত নবদ্বীপবাসীগণ, এমনকী যারা মহাপ্রভুকে নিন্দা করতেন, যারা মহাপ্রভুকে হিংসা করতেন, খবর পেলেন যে, মহাপ্রভু নবদ্বীপ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তারাও সবাই চোখের জল ফেলল । সবাই তীব্রভাবে টের পেলেন যে, নবদ্বীপ একেবারে অন্ধকারময় হয়ে গেল ।

কাটোয়া থেকে মহাপ্রভু মত্তসিংহের মত বৃন্দাবনে ছুটতে ছুটতে যেতে শুরু করলেন । একদিন রাত কাটানোর জন্য তিনি এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করলেন । সমস্ত ভক্তগণ তাঁর সঙ্গে ছিলেন কিন্তু ভোরের সময় যখন সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন তখন মহাপ্রভু পালিয়ে গেলেন । মঙ্গলারতির সময় সবাই উঠে দেখলেন মহাপ্রভুর ঘরে নেই । তাঁরা প্রভুকে চারদিকে খুঁজতে লাগলেন কিন্তু শুধু মাত্র গভীর রাতে যখন আশেপাশে সব কিছু শান্ত ছিল তাঁরা হঠাৎ করে মহাপ্রভুর কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পেলেন । শব্দের দিকে গিয়ে তাঁরা এক মাঠে পৌঁছে মহাপ্রভুকে খুঁজে পেলেন ।

মহাপ্রভু এঁকেবেঁকে চলে যাচ্ছিলেন—মাঝে মাঝে তিনি পূর্ব দিকে যেতেন, মাঝে মাঝে পশ্চিম দিকে । কোথায় প্রভু যাচ্ছিলেন তা না জেনে ভক্তগণ পিছে পিছে গেলেন । যখন মহাপ্রভু হঠাৎ করে পূর্ব দিকে ঘুরে গেলেন তাঁরা আনন্দিত হয়ে পড়ে ভাবলেন যে, মহাপ্রভু হয়তো নবদ্বীপে ফিরে যাবেন । নিত্যানন্দ প্রভু ভক্তগণের চিন্তাভাবনা বুঝে ঠিক করলেন, “হয়তো মহাপ্রভু তাঁর জন্মস্থান কখনও আর ফিরে যাবেন না, যাই হোক । আমি তাঁকে অন্ততঃপক্ষে গৌড় মণ্ডলের মধ্যে রাখতে চেষ্টা করব ।” শেষে তিনি ঠিক করলেন যে, তিনি মহাপ্রভুকে অদ্বৈত প্রভুর বাড়িতে নিয়ে যাবেন—তাঁর বাড়ি নবদ্বীপের কাছাকাছি, তাই সমস্ত ভক্তগণ ওখানে গিয়ে প্রভুর দর্শন পেতে পারবেন । যে কোন ভাবে নিত্যানন্দ প্রভু সফল হয়েছিলেন—বৃন্দাবনে যাওয়ার পরিবর্তে তিনি মহাপ্রভুকে শান্তিপুরে নিয়ে গিয়েছিলেন ।

 


 

← (সূচনা) শ্রীজগন্নাথদেব মহাপ্রভুর পুরীতে যাত্রা : শান্তিপুর →

 

অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্­গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত


ডাউনলোড


 

সূচীপত্র

সূচনা :
শ্রীজগন্নাথদেব
মহাপ্রভুর ইচ্ছা ও পুরীতে যাত্রার আরম্ভ
মহাপ্রভুর পুরীতে যাত্রা :
শান্তিপুর
রেমুণা
সাক্ষীগোপাল
ভুবনেশ্বর
ভুবনেশ্বর শ্রীলিঙ্গরাজ
আঠারনালা
শ্রীপুরীধামে :
সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের সথে মিলন
সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের শিক্ষা
কাশী মিশ্রের কথা
রামানন্দ রায়ের পুনর্মিলন ও প্রকৃতি
ভক্তদের সহিত শ্রীক্ষেত্রে বার্ষিক মিলন
রাজা প্রতাপরুদ্রের প্রতি কৃপা
গোবিন্দ প্রভুর শিক্ষা
দর্শনের আর্ত্তি
শ্রীআলালনাথের কথা
কালিদাসের ব্যতিক্রম
সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের প্রসাদে রুচি
“ষাঠী বিধবা হয়ে যাক !”
গঙ্গা মাতা গোস্বামিণী
শ্রীগোপাল গুরুর কথা
শ্রীজগদানন্দ পণ্ডিতের প্রেম
শ্রীলসনাতন গোস্বামীর সঙ্গ
রামচন্দ্র পুরীর কথা
শ্রীপরমানন্দ পুরীর ভক্তিকূপ
দামোদর পণ্ডিতের বিদায়
ছোট হরিদাসের শাস্তি
গুণ্ডিচা-মার্জ্জন লীলা
শ্রীনারায়ণ ছাতায়
চটকপর্ব্বতের কথা
গম্ভীরা—বিরহের জ্বলন্ত ঘর
শ্রীল হরিদাসঠাকুর : নামাচার্য্য শিরোমণি
শ্রীগদাধর পণ্ডিত : মহাপ্রভুর ছায়া
শ্রীরঘুনাথদাস গোস্বামীর শ্রীপুরীধামে আগমন ও ভজন
পরিশেষ

বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥